৩.  দুর্ভিক্ষ সিরিজ (Darkening Days of Bengal):

করোনা মহামারীতে এদেশে নিম্ন আয়ের মানুুষদের জীবনে  নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে  । এসময়  ৭০ বছর  আগে আঁকা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের " দুর্ভিক্ষের ছবি" গুলো খুুবই অর্থবহ  ।

 

সময়টা ১৯৩৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সেই যুদ্ধের থাবা থেকে বাংলাদেশও রেহাই পেল না। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নিষ্ঠুর নীতির কারণে বাংলায় খাদ্যসঙ্কট দেখা দিল। তিনি বাংলার মানুষের মুখের গ্রাসের আকাল বানিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের খাবারসহ অন্যান্য রসদ জোগালেন। যার ফলে বাংলা ১৩৫০ সালে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। খাবারের খোঁজে দলে দলে ভূখা মানুষ কলকাতা শহরে হাঁটা দিল। পথের উপর মানুষ পড়ে থাকল। ডাস্টবিন থেকে মানুষ রুটির টুকরো তুলে খাচ্ছে। কলকাতা পড়ে থাকা মরা মানুষ কাক, শকুন ও কুকুরের আনাগোনার শহর হয়ে উঠল।



জয়নুল সে সময় বয়স তিরিশের তরুণ। এর মধ্যে তিনি ১৯৩৮ সালে পাঁচ বছরের চিত্রকলার পাঠ শেষ করে শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় কাজও করেন। থাকেন কলকাতার সার্কাস রোডে। বাসা থেকেই শুনতে পান ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। একবার বাসা থেকেই তিনি দেখতে পেলেন, একটা কঙ্কালের মতো মেয়ে রাস্তায় ফুটপাতে মরে পড়ে আছে আর তার বুকের কাছে একটা শিশু চিৎকার করে কাঁদছে।

তিনি ব্যথিত হলেন। ভেঙে পড়লেন না। বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন। পণ করলেন মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি কলকাতার পথে পথে ঘোরেন। মানুষের দুর্দশা দেখেন আর দুর্ভিক্ষ সিরিজের একের পর এক ছবি আঁকতে লাগলেন। এই ছবিগুলো কলকাতার কলেজ মার্কেটে প্রদর্শিত হল। তার খবর বের হল কাগজের পর কাগজে। প্রদর্শনীর খবর বিদেশেও চলে গেল। বাংলার মানুষের দুর্দশার কথা চাপা থাকল না। এরপর ১৯৫০ দশকের শুরুর দিকে ইউরোপের ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং এশিয়ার তুরস্ক সফর করেন। এই সফরে তিনি ওইসব দেশের শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হন। নিজের ছবির প্রদর্শনী করেন। তার ছবির বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের উপর আঁকা ছবিগুলো দারুণভাবে সমাদৃত হয়।


Comments

Popular posts from this blog

আরোরা/নর্দান লাইটের বিজ্ঞান

Ambigram , A Magical Calligraphy